আমাদের দেশি তুলসীর থেকে পাতার সাইজ্ অনেকটাই বড়। আর পাতার উপরটাও রোঁয়া ওঠা নয়, বেশ তেলতেলে, মসৃণ। পাতাটা মুচড়োলে বুনো গন্ধের সঙ্গে মিশে থাকে হালকা মশলাদার একটা গন্ধ। আর তাতেই বাজিমাত। কয়েক হাজার বছর ধরে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের রান্নার অন্যতম জনপ্রিয় উপাদান হয়ে উঠেছে ইতালিয়ান বেসিল বা সুইট বেসিল।
পাঁচ হাজার বছর আগে থেকেই তুলসীকে নিজেদের শারীরিক, আধ্যাত্মিক ও সামাজিক জীবনের অংশ করে নিয়েছে মানবসভ্যতা। ভারত এবং ইরানকে এই গাছের উৎপত্তিস্থল বলে মনে করা হলেও এখন সব কটি মহাদেশের সব অংশেই সমাদৃত এর হাজারো ভ্যারাইটি। আয়ুর্বেদ সংহিতার স্বর্ণযুগে- চরকে সুরসা নামে এই ভেষজ উদ্ভিদের আলোচনা করা হয়েছে। ব্রহ্মকৈবর্তপুরান, স্কন্দপুরানেও পাওয়া গিয়েছে তুলসীর উল্লেখ।
তুলসীর ওষধি গুণ কতটা, সেই গবেষণার কাজ কয়েক হাজার বছর ধরে চললেও এখনও পুরোপুরি শেষ করে উঠতে পারেনি মানুষ। ২০১৬ তে আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের একটি গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে তুলসীমঞ্জরী অর্থাৎ তুলসীর ফুল থেকেও পর্যাপ্ত পরিমানে উদ্বায়ী এসেনসিয়াল অয়েল বেরিয়ে মিশে যায় বাতাসে। আবার অথর্ববেদের উপবর্হণ সংহিতার শ্লোকে বলা হয়েছে,
সুভগা কীট সংচ্ছেদি অন্ত:মার্গং বিশোধয়েৎ (উপবর্হণ ৩।২৪)
এই সুভগাই হল তুলসী এবং এই অধ্যায়েই বলা হয়েছে- এর মঞ্জরীর শরবৎ পান করলে শ্লেষ্মা এবং রক্তের ব্যধি দূর হয়।
হাকিম-কোবরেজ-কেমিস্টদের কঠিন ওষধি তত্ত্ব আর গবেষণার বাইরে গিয়ে তুলসীকে নিজেদের হেঁসেলে ঢোকাতেও কম তৎপর হয়নি ভোজনরসিক মানুষ। তাইতো তাজা হোক, বা শুকনো বা গুঁড়ো, সুইট বেসিল বা ইটালিয়ান বেসিলের কালেকশন আজ রাঁধুনীদের শেলফে মাস্ট। কন্টিনেন্টাল রান্নায় এর জুড়ি মেলা ভার। পেস্তো অর্থাৎ ইতালিয়ান গ্রিন অয়েল অ্যান্ড হার্ব সস এবং ইতালিয়ান টমাটো সস ‘মারিনারা’ তৈরিতে ব্যবহার করা হয় এর সবুজ পাতা। এ ছাড়া স্যালাডে টমাটোর স্লাইসের ওপর এর পাতা ছিঁড়ে ছড়িয়ে দিলেও দারুন জমে। মধ্যপ্রাচ্যে ওয়াইন তৈরিতেও ব্যবহার করা হয় ইতালিয়ান বেসিল বা সুইট বেসিল। সবুজ পাতা না জুটলে ব্যবহার করা হয় শুকনো করা গুঁড়ো পাতাও।
নানা সংকর প্রজাতি পাওয়া গেলেও এটির বিজ্ঞানসম্মত নাম হল Ocimum Basilicum L. আমাদের আবহাওয়াতেও অল্প যত্ন করলেই দিব্যি বড় হয় সুইট বেসিল বা ইতালিয়ান বেসিল। জল নিয়মিত দিলে ভাল। শরতে এই গাছের পাতা আর বীজ শুকিয়ে যায়। তখন বীজ সংগ্রহ করে নেওয়া যায়। গরমে মাটিতে এই বীজ ছড়িয়ে দিলেই ফের নতুন গাছ পাতা মেলে। গুঁড়ো হিসেবে এর ব্যবহার করতেই পারেন, তবে রান্নায় সবুজ হার্বসের মজা পেতে গেলে ছাদে বা টেরেসে এই বেসিলের একটা চারা বসিয়ে নেওয়া মাস্ট।
