আমাদের চলতি ভাষায় আজোয়ান বা জোয়ান পাতার গাছ। যদিও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই গাছটিকে ডাকা হয় বিভিন্ন নামে। দক্ষিণ আমেরিকায় যেমন এই গাছের নাম কিউবান ওরেগানো, ওয়েস্ট ইন্ডিজে আবার স্প্যানিশ থাইম। ঠিক তেমনই মেক্সিকোতে মেক্সিকান মিন্ট, ইন্দোনেশিয়ায় তোরবাঙ্গুন, বার্বাডোজে পুওর ম্যানস পর্ক। এ ছাড়া পৃথিবী জুড়ে জায়গা বিশেষে স্যুপ মিন্ট, ইন্ডিয়ান বোরেজ, ফ্রেঞ্চ থাইম, লাটাই সহ বিভিন্ন নামে সমাদৃত এই গাছ। দুর্দান্ত ওষধি গুন আর রান্নায় ব্যবহারের হাজারো উপায়ই এই গাছের জনপ্রিয়তার আসল কারণ। সেই কারণেই দক্ষিণ ভারতে কন্নড ভাষায় এই গাছের পাতাকে বলা হয় ‘সাভির সম্বর সপ্পু’, বা হাজারো গুনের পাতা।
নামবিভ্রাট কাটাতে জেনে রাখা ভাল এই গাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম। উদ্ভিদবিদ্যার ভাষায় এই গাছটি হল Coleus amboinicus বা Plectranthus amboinicus। ইন্দোনেশিয়ার অ্যাম্বন দ্বীপে এই গাছটিকে প্রথম নথিভুক্ত করা হয়, তাই amboinicus। এই প্রসঙ্গে একটি কথা বলে রাখা ভাল। আমরা আজোয়ান পাতার গাছ বলে ডাকলেও এই গাছের সঙ্গে আজোয়ান গাছের কোনও সম্পর্ক নেই। দুটি সম্পূর্ণ আলাদা গাছ। এই গাছের পাতায় আজোয়ানের মতো তীব্র গন্ধ বলেই এটিকে আজোয়ান পাতার গাছ বলে থাকেন আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন। সেই সূত্রেই এটি আমাদের কাছে চলতি ভাষায় আজোয়ান পাতার গাছ।
এই গাছের উপকারিতা নিয়ে স্বল্প কথায় বলা খুবই কঠিন। তবে যাঁরা রান্না করতে ভালবাসেন, তাঁরা খুব সহজেই এই পাতা নিয়ে নিজেদের রকমারি এক্সপেরিমেন্ট করতে পারেন। কন্টিনেন্টাল রান্নায় এই পাতার ব্যবহার খাবারে আনে এক অন্য স্বাদ। একটু মশলা দেওয়া বেসনে ডুবিয়ে ডিপ ফ্রাই করে একটু সস দিয়ে খেলে বোঝা যায় এর চমৎকারিত্ব। একটু দই আর নুন দিয়ে মিক্সিতে ঘুরিয়ে নিলে তৈরি হয় চমৎকার চাটনি। পরোটার সঙ্গে দারুণ যায় এই চাটনি। জলে কয়েকটা পাতা ফুটিয়ে নিয়ে সেই জল খেলে সর্দিকাশির ক্ষেত্রেও খুব উপকার পাওয়া যায়।
তাই রাস্তাঘাটে দেখলে এই গাছটিকে একদম অবহেলা করবেন না। তুলে নিয়ে এসে বাড়ির বাগানে, বা বারান্দায় একটি টবে পুঁতে ফেলুন। আমাদের আবহাওয়ায় খুব সহজে বিশেষ কোনও যত্ন ছাড়াই দিব্যি বেড়ে ওঠে এই গাছ। ডাল কেটে চারা বানানোও খুব সহজ। আর বাড়িতে লোকজন এলে রান্না করে তাক লাগানোর জন্য হাজারো উপায় তো আছেই।